নিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের পেকুয়ায় কক্সবাজার অটোরিকশা, টেম্পো ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কল্যাণ তহবিল এর নামে চলছে টাকা আত্মসাতের মহোৎসব। সংগঠনের নামে শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা নিমিষেই হয়ে যাচ্ছে হাওয়া। এতে উক্ত সংগঠনের শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।

সংগঠন সংশ্লিষ্টরা জানান, সংগঠনের পেকুয়ায় লাইনসহ ভর্তি আছে এক হাজারের অধিক সিএনজি অটোরিকশা। এসব সিএনজি অটোরিকশা থেকে ১৫টাকা হারে দৈনিক আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। এসব চাঁদা উঠানোর জন্য উপজেলার ১০টি আলাদা স্পটে লোক নিয়োগ করেছে সংগঠনের নেতারা। এছাড়াও পুলিশ টোকেনের নামে প্রতি সিএনজি অটোরিকশা থেকে আদায় করা হচ্ছে মাসিক ১০০টাকা হারে চাঁদা। মাসশেষে যার
পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক লক্ষাধিক টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা জানান, কল্যাণ তহবিলের নামে আদায় করা হলেও কোন শ্রমিকের কল্যাণে আসছে না এসব টাকা। বিগত ২-৩বছরে দুর্ঘটনায় আহত বা অসুস্থ কোন শ্রমিক এ তহবিল থেকে পায়নি কোন ধরণের সহায়তা। কার কল্যাণে এ তহবিল তা শুধু নেতারাই জানেন। একপ্রকার জোর করে শ্রমিকদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হয়। মাসে শুধুমাত্র কল্যাণ তহবিলেই জমা পড়ে প্রায় ৫লাখ টাকা।

তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের বড় চেয়ারগুলো রাজনৈতিক নেতাদের দখলে চলে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রমিকবান্ধব কর্মকান্ডের। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পেকুয়ার শ্রমিকদের রাস্তা খোজে নেওয়া অতীব জরুরি।

কক্সবাজার অটোরিকশা, টেম্পো ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পেকুয়া শাখার প্রচার সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংগঠনিক নিয়মনীতি কোন বালাই না থাকলেও সংগঠন চলছে শুধুমাত্র টাকা ভাগবাটোয়ারার ক্ষেত্র হিসেবে। শ্রমিকদের রক্ত চোষে খেতে এ সংগঠনকে জিম্মি করে রেখেছে সরকার দলীর রাজনৈতিক পদবীধারী নেতারা।

কক্সবাজার অটোরিকশা, টেম্পো ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পেকুয়া শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, সংগঠনে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন কৌশলে শ্রমিকের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে মেরুদন্ডহীন করা হয়েছে।

কক্সবাজার অটোরিকশা, টেম্পো ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পেকুয়া শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের সাথে যাদের নূন্যতম সংশ্লিষ্টতা নেই তারাই এ সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংগঠনের বর্তমান নেতাদের দ্বারা কোন শ্রমিক উপকৃত হয়েছে এমন কোন নজির নেই। বরং কোন কাজে শ্রমিকরা তাদের কাছে গেলে, গুনতে হয়েছে টাকা। সড়ক পরিবহণ সংশ্লিষ্ট কোন সালিশ বিচার তাদের হাতে গেলে, ওই শ্রমিকদের পেয়ে বসেন নেতারা। বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেয় শ্রমিকের সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করা অর্থ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এইযে, এসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ দেখায় না। আর কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলেই
পড়তে হয় মিথ্যা মামলা হামলার গ্যাঁড়াকলে।

জসিম উদ্দিন আরো বলেন, নাছির-বারেক সিন্ডিকেট গ্রাস করে রেখেছে শ্রমিক ইউনিয়নের পেকুয়া কার্যালয়। এই সংগঠনের নামে কোথাও একটি টাকাও জমা নেই। কল্যান সহ নামে বেনামে শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা গলাধঃকরণ করেই যাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতি থেকে সংগঠনকে বাঁচানো না গেলে, শ্রমিকদের ন্যায্যদাবী, অধিকার কখনো আদায় করা সম্ভব হবেনা। বর্তমানে সাধারণ শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আশাকরছি অচিরেই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকারটুকু বুঝে নিবে।

এব্যাপারে কক্সবাজার অটোরিকশা, টেম্পো ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পেকুয়া শাখার সভাপতি নাছির উদ্দিন বলেন, সংগঠনের যাবতীয় আয়ব্যয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। চাইলে যেকেউ তা দেখতে পারেন। এছাড়াও সংগঠনের দুর্ঘটনাজনিত আহত বা অসুস্থ শ্রমিককে সংগঠনের নিয়মানুসারে সহায়তা প্রদান করা হয়।

নাছির উদ্দিন আরো বলেন, বর্তমান কমিটি গত দুইবছরে সংগঠনের মূলধন পাঁচ লাখ টাকায় দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু আগের কমিটি সংগঠনের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। মামলা জটিলতায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছেনা।